সুনামগঞ্জে যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন করেন হত্যা মামলায় স্বামী শাহ আলমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। বুধবার (৩১ মে) বিকেলে এ রায় ঘোষণা করেন তিনি। একই আদালত এইক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন অপর তিনটি মামলায় আরো তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদÐ দিয়েছেন বিচারক।
আদালত সূত্র জানায়, জেলার তাহিরপুর উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের মো. সামছুদ্দিনের মেয়ে জাহানারা বেগমকে (২৫)কে ঘটনার ৩ বছর আগে মধ্যনগর থানাধীন খিদিরপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শাহ আলমের সাথে পারিবাকিরভাবে বিবাহ দেয়া হয়। বিবাহের কিছুদিন পর স্বামী শাহ আলম স্ত্রী জাহানারাকে যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে জাহানারাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে শাহ আলম তার বাবাকে নিয়ে স্ত্রী জাহানারার বাবা বাড়িতে গিয়ে আর নির্যাতন করবে না মর্মে অঙ্গীকার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও যৌতুক দাবীতে নির্যাতন শুরু করে। গত ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সকাল অনুমান ৯টারাদকে জাহানারা বেগমকে যৌতুক দাবীতে মারপিট করে শুরু করে। মারপিটের কারণে জিাহানারা মারা যাওয়ার বিষয়টি ঘাতক স্বামী বিষয়টি বুঝতে পেরে বাড়ি সংলগ্ন করচ গাছে নিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। পরে আশপাশের লোকজন দেখতে পেয়ে লাশকে নামিয়ে স্বামী শাহ আলমের ঘরের সামনে নিয়ে রাখে। খবর পেয়ে জাহানারার বাবা সামছুদ্দিন শাহ আলমের বাড়িতে গিয়ে জাহানারার শরীরে জখমের চিহ্ন দেখতে পেয়ে পুলিশে খবরদেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন সামছুদ্দিন।
তদন্ত শেষে পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আইন, ২০০০ এর ১১(ক) ধারায় আদালতের চার্জশীট দাখিল করে।
বুধবার বিকেলে সাক্ষ্য প্রমান শেষে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক অসামি শাহ আলমকে মৃত্যুদÐ প্রদান করেন। মামলার রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক ছিল। (তবে মঙ্গলবার ৩০ মে মধ্যনগর থানা পুলিশ আসামি শাহ আলমকে গ্রেফতার করেছে। তবে মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত আদালতে আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করা হয় নাই)।
সূত্র আরও জানায়, ২০১১ সালে ৮ অক্টোবর রাত অনুমান ১১ টার দিকে ছাতক উপজেলার ছৈলা গ্রামের আশিক মিয়ার ছেলে নেছার মিয়া একই গ্রামের এক নারীকে কথা আছে বলে বাড়ির পেছনে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষন করে। পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতে সমাধা না হওয়ায় ওই নারী নেছার মিয়া ও সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পরে সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে গতকাল নেছার মিয়াকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত এক লক্ষ টাকা জরিমানার প্রদান করে জরিমানার টাকা ভিকটিম ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সোহেল মিয়াকে বেখসুর খালাস প্রদান করেন।
এদিকে,২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ধর্মপাশা উপজেলার নোয়ান্দ গ্রাম ভিকটিম ৬ বছরের শিশুকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবেশী রহম আলীর ঘরে টিভি দেখতে যায়। এসময় রহম আলীর স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে না থাকার সুবাধে জোরপূর্বক শিশুটিকে ধর্ষনের করে। পরে শিশুটি তার মায়ের কাছে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে রহম আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গতকাল বিকেলে আদালতের বিচারক আসামি রহম আলীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন।
অপর মামলায়, ছাতক উপজেলার লক্ষমসোম গ্রামের সুলেমান মিয়র মেয়ে শামীমা বেগম (২০)কে তৎকালিন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার রনসী গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে সুলেমান মিয়া (৩০) এর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদির যেতে না যেতে ২০২১ সালের ৯ মে সকাল ১০ টার দিকে দেড় লাখ টাকা যৌতুকের দাবিীতে মারপিট করে আহত করে। আহত অবস্থায় শামীমা কৈতক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। বুধবার সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আদালত আসামি সুলেমান মিয়াকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।