আজ মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সুনামগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। এ দিনকে সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস হিসেবে জেলার মুক্তিকামি জনতা অবিহিত করেছেন। সেই থেকে প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এ দিবসটি উপলক্ষে অন্যান্য বছরের ন্যায় জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড শহরে র্যালি ও আলোচনা সভা এবং সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক করা হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের বিষয়টি নিয়ে জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড শহরের মাইকিং করেছেন।
এছাড়াও শহরে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সুনামগঞ্জকে শত্রæমুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বনগাঁও মুক্তিযোদ্ধাদের কোম্পানি হেডকোয়াটারে সুনামগঞ্জ শহরকে শত্রæমুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মেজর মুত্তালিব ছাড়াও মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন রঘুনাথ ভাটনগর ও ক্যাপ্টেন যাদব সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের ‘এ’ কোম্পানিকে যোগীরগাঁও এলাকা, ‘বি’ কোম্পানিকে হালুয়াঘাট এলাকা, ‘সি’ কোম্পানিকে হাসননগর এলাকা, ‘ডি’ কোম্পানিকে ভাদেরটেক ও লালপুর এলাকা, ‘ই’ কোম্পানিকে মল্লিকপুর এলাকা (সিলেট-সুনামগঞ্জ রাস্তা বিচ্ছিন্ন করা), ‘ডিইএফ’ কে কোম্পানি বেরীগাঁও ও কৃষ্ণতলা এলাকা (অতিরিক্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংরক্ষণ), ‘এডিএম’ কোম্পানিকে : রসদ পরিবহন এবং এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে বনগাঁওয়ে সদর দফতরে রাখা হয়। সুনামগঞ্জ মুক্ত করার পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল ‘খরগোস’।
১৯৭১ সালের এই দিন সুনামগঞ্জ মহকুমায় মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ শহরকে পাকহানাদার মুক্ত করেন। হানাদার বাহিনীর পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘ জয়বাংলা ধ্বনি’ আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে তরুণ-যুবক সবাই।
তিনি আরও জানান, যাদের আত্মত্যাগে দেশ শত্রæমুক্ত হয়েছিল তাদের স্মরণে ‘হানাদার মুক্ত দিবস’ পালনে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার দাবি সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধাসহ সুশীল সমাজের।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকসেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলাদেশের মানুষের ওপর। তাদের প্রতিরোধ করতে সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জবাসীও গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন।
৫ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ছিল সুনামগঞ্জ। কমান্ডার ছিলেন মীর শওকত আলী।
সুনামগঞ্জ মহকুমায় চারটি সাব সেক্টরে ভাগ করা হয়। সেক্টরগুলো হলো-সেলা সাব-সেক্টর, টেকেরঘাট সাব-সেক্টর, বালাট সাব-সেক্টর, ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টর।
সেলা সাব-সেক্টরে কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন সৈয়দ হেলাল উদ্দিন, টেকেরঘাট সাব- সেক্টরের দায়িত্ব নেন মেজর মোসলেহ উদ্দিন, বালাট সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন, মেজর এম এ মোতালেব ও ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন নাজিম কয়েছ চৌধুরী।
সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সফিয়ন জানান, ১৩ অক্টোবর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় ছাতক সিমেন্ট কোম্পানিতে একটানা ৩৬ ঘণ্টা। এ যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন পাকসেনা নিহত ও অর্ধশত পাকসেনা আহত হন। এ যুদ্ধে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
আবু সুফিয়ান আরও জানান, ২১ অক্টোবর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বর্তমান সুরমা ইউনিয়নের বেরীগাঁও-এ যুদ্ধ হয় বেরীগাঁও-এ পাকসেনাদের কেম্পানি হেডকোয়াটার ছিল। এ যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটে। এরপর ছাতক উপজেলা গোবিন্দগঞ্জ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে বেশির ভাগ ফলাফল মুক্তি বাহিনীর অনুকুলে আসে।
৫ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন রঘুনাথ ভাটনগর ও ক্যাপ্টেন যাদব বনগাও থেকে আমবাড়ি আসেন। বালাটস্থ রিজার্ভ ও গেরিলা গ্রæপগুলোর মধ্য থেকে বাছাইকৃত মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ কোম্পানি (বালাট কোম্পানি) স্বাধীনতার প্রায় মাস খানেক আগেই বিশ্বাম্ভরপুরে অবস্থান করছিল। যৌথ কমান্ডের নির্দেশে এটি েেগৗরারং হয়ে অগ্রসর হতে থাকে।
সুনামগঞ্জ পৌঁছে কোম্পানিটির অর্ধেক বুলচান্দ হাইস্কুলে এবং অপর অর্ধেক জয়কলস হাইস্কুলে অবস্থান নেয়। জয়কলসে অবস্থানরত প্লাটুন ভারত থেকে দেশে প্রত্যাগমনকারী বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর নিরাপদ চলাচলে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মেজর মুত্তালিব যোগীরগাঁও থেকে রওয়ানা দিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে পৌঁছলেও দখলদার বাহিনী তার আগের (৫ ডিসেম্বর) রাতেই সুনামগঞ্জ শহর ছেড়ে পালায়।
৬ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে সুনামগঞ্জে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে থাকেন।