খাঁদের কিনারা বললে ভুল হবে, একেবারে খাঁদের মধ্য থেকে দলকে টেনে তুলে অবিশ্বাস্য ঐতিহাসিক এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যভাবে বলতে গেলে আফগানিস্তানের হাতের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আফিফ ও মিরাজ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে রূপকথার জন্ম দিয়ে ৪ উইকেটে জিতেছে টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। জয়ে মূল অবদান আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজের বিশ্বরেকর্ড গড়া পার্টনারশিপের।
১৮ রানের মধ্যে যখন লিটন-তামিমের পর মুশফিক আর সাকিবও ফিরে গেলেন, তখন বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে হাসাহাসিই হয়েছে। ৪৫ রানের মধ্যে যখন আরও দুই উইকেট গেল, তখন তো বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড নিয়ে ঘাঁটাঘাটি শুরু হয়েছে। কিন্তু এর পরই পাল্টা আক্রমন শুরু হয় আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের। সেই আক্রমন আর সামাল দিতে পারেনি আফগানরা। ব্যার্থ হয়েছে তাদের সব বোলার। মিরাজ-আফিফের বীরত্বগাঁথায় শেষ পর্যন্ত মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয় আফগানিস্তান। আর তখনই আনন্দে ভাসতে শুরু করে পুরো বাংলার ক্রিকেট প্রেমীরা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান জড়ো করে ২১৫ রান। ৪৯.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। ৮৪ বলের মোকাবেলায় ৪টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে ৬৭ রান করেন তিনি। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে রহমত শাহ ৩৪, অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি ২৮ ও মোহাম্মদ নবী ২০ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজুর রহমান তিনটি এবং সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে দলীয় ১৩ রানে লিটন দাসকে হারানোর পর ধ্বস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। এতে ভয়ানক বিপর্যয়ে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। দলীয় রান ৫০ পেরোনোর আগে লিটন-তামিম ছাড়াও একে একে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এর মধ্যে বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকি একাই শিকার করেন তামিম, লিটন, মুশফিক ও ইয়াসিরকে। বল হাতে আফগানিস্তানের দুর্দান্ত শুরুর পর বাংলাদেশের পরাজয়কে মনে হচ্ছিল নিছক সময়ের ব্যাপার। তবে তখন অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
সপ্তম উইকেটে দুজনে গড়েন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি, যা ৫০ রানের মধ্যে ৬ উইকেটের পতনের পর যেকোনো উইকেটে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পার্টনারশিপ। রান তাড়ায় ৭ম উইকেট জুটিতে এটাই বিশ্বের সেরা ইনিংস। ব্যাটিং অর্ডারের সপ্তম ব্যাটার হিসেবে আফিফ ও অষ্টম ব্যাটার হিসেবে মিরাজ খেলেন বাংলাদেশের সেরা ইনিংস। তাদের ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে জয়ের বন্দরে ভেড়ায়।
রশিদ-নবী-মুজিবদের দেখে শুনে খেলে, ১৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে আফিফ-মিরাজ জয় নিশ্চিত করেন ৪ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে। মিরাজ ১১৫ বলে ৯৩ ও আফিফ ১২০ বলে ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন। আফিফ হাঁকান ১১টি চার ও ১টি ছক্কা, মিরাজের ইনিংসে ছিল ৯টি চার।
আফগানদের পক্ষে ফজলহক ফারুকি চারটি এবং রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ৪৯.১ ওভারে ২১৫/১০ (রহমতউল্লাহ ৭, জাদরান ৯, রহমত শাহ ৩৪, শাহিদি ২৮, নাজিবুল্লাহ ৬৭, নবী ২০, নাইব ১৭, রশিদ ৯, ইয়ামিন ৫, মুজিব ০, ফারুকি ০; মিরাজ ১০-৩-২৮-০, সাকিব ৯-১-৫০-২, তাসকিন ১০-০-৫৫-২, মুস্তাফিজ ৯.১-০-৩৫-৩, শরিফুল ১০-১-৩৮-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-১)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২১৯ ( তামিম ৮, লিটন ১, সাকিব ১০, মুশফিক ৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, ইয়াসির ০, আফিফ ৯৩, মিরাজ ৮১; ফারুকি ১০-১-৫৪-৪, রশিদ ১০-১-৩০-১, মুজিব ১০-০-৩২-১, নবী ১০-১-৩২-০)।
ফলাফল: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী।