শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আপনদৃষ্টি ৪৭

আমরা ভুলতে বসেছি বঙ্গবীর ওসমানীকে

আব্দুল মালিক

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক
  • ১০:২১ অপরাহ্ণ, ১২ নভেম্বর ২০২০

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানীকে এখন আমরা ভুলতে বসেছি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা দেশের আবাল-বৃদ্ধ সকলেরই জানেন। তবুও তিনি বর্তমানে অবহেলিত। আজ আমরা এই সেনানায়ককে ভুলতে বসেছি।

বর্তমান সময়ে ওসমানীর জীবন, দর্শন নিয়ে আলোচনা বর্তমান প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন হলেও। সে বিষয়টি আমলে নেয় নি কেউ।

সিলেটে একটি প্রবাদ আছে “কান্দে পুতে দুধ খায়, খান্দে না পুতে টকা খায়”। আজ যদি এম এ জি ওসমানীর কোন বংশধর থাকত, তাহলে প্রতি বছর তাকে নিয়ে কিছু না কিছু চর্চা হত।

যদিও আমরা সিলেটের মানুষ একজন সিলেটি হিসেবে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে ওসমানীকে আর মূল্যায়ণ করা হয়নি।

তিনি এখন অবহেলিত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই সরকারের কাছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার দাবি এই সেনানায়কের অবদান আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেয়া হয়। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন তাঁর অবদান, আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারি।

যুদ্ধের ময়দানে একজন প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব যেমন সবার উপরে, ঠিক তেমনি একটি যুদ্ধের জয়পরাজয় নির্ভরশীল প্রধান সেনাপতির ওপর। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের ময়দানে যে মহানায়ক কৃষক, শ্রমিক, থেকে ছাত্র শিক্ষকসহ মুক্তিপাগল দামাল ছেলেদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন শক্তি ও সাহস যুগিয়ে যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়েছেন।

আজ কালের প্রবাহে বিলীন হয়ে যাচ্ছে যে নাম, তিনি হচ্ছেন সিলেটের মানুষ মেজর জেনারেল এম এ জি উসমানী।

১৯১৮ সালে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন ওসমানী। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার (অধুনা ওসমানী নগর উপজেলা) দয়ামীরে। তাঁর পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুন। খান বাহাদুর মফিজুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী।

ওসমানীর জন্মের প্রাক্কালে ১৯১৮ সালে খান বাহাদুর মফিজুর রহমান তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ মহকুমায় সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের বসবাস ছিল সুনামগঞ্জ সদরেই। এখানেই জন্ম হয় ওসমানীর।

যদিও যুদ্ধ করি নাই কিন্তু যুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে বলেই বলতে পারি, স্বাধীনতা পরবর্তীতেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার পর পরই যে নামটি উচ্চারিত হত, তিনি এম এ জি ওসমানী ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি।

ওসমানী শুধু সেনাবাহিনীতে ছিলেন না, এর পাশাপাশি রাজনীতিও করছেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষন দেন।

ওই সময় তাঁকে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা চিন্তা করে মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ঘোষণা করেন। সেই সময় মক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টর ছিল এবং প্রত্যেকটি সেক্টরের এক একজন কমান্ডার ছিলেন।

১১টি সেক্টরসহ সুদীর্ঘ ৯ মাসের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধটাই ছিল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে। সে সময়ে বাংলাদেশের সামরিক অফিসারদের মধ্যে এম এ জি উসমানী ছিলেন একজন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা।

১৯৭১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেল পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। এক কথায় স্বাধীনতার পরবর্তীতে তাঁর অনেক ভুমিকা রয়েছে।

আমি সেদিকে যাব না। আমি শুধু বলতে চাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবদানকে সামনে রেখে জাতির শ্রেষ্ট সন্তান হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়ে নাম ধরে স্মরণ করতে হলে, নামের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সবাইকে স্মরণ করা উচিৎ।

লক্ষ্য করলাম মুজিব বর্ষের রাষ্ট্রপতির ভাষণে অনেকের নাম আসলেও নেই মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর নাম। এ নামটি রাষ্ট্রপতি ভাষনে উনুচ্চারিত রয়েছে।


অন্যান্য খবর