গত বছর দেশে চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৪৩১ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন সাত হাজার ৩৭৯ জন। নিহতের মধ্যে ৮৭১ জন নারী ও ৬৪৯ জন শিশু। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটি জানায়, বছরব্যাপী ১১৯ টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৭২ জন নিহত ও ১৩৭ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ৬২ জন। আর ১০৮ টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত ২২৮ জন এবং আহত ৫৪ জন।
সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সই করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এক হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রয়েছে। এতে নিহত এক হাজার ৪৬৩ জন, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৫১২ জন পথচারী রয়েছে, যা মোট নিহতের ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮৩ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এক হাজার ৮১১টি (৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, এক হাজার ৬০৫টি (৩৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১৭টি (১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৬৪৪টি (১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে (ফেরিঘাট, নদীর তীর, ফসলের মাঠ, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ মাঠ) ৫৮টি (১ দশমিক ২২ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এক হাজার ১১৪টি (২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক হাজার ২৫৫টি (২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, এক হাজার ৫৭৩টি (৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ ধাক্কা দেওয়া, ৭০৯টি (১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৮৪টি (১ দশমিক ৭৭ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ। প্রাণহানি বেড়েছে চার দশমিক ২২ শতাংশ এবং আহতের মাত্রা বেড়েছে তিন দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
গত বছর করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই মাসের সাধারণ ছুটির সময় দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল, মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল, এরপরেও দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ না থাকলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ব্যবধান আরও বেশি হতো বলে ধারণা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
তারা কয়েকটি সুপারিশ করেছে যার মধ্যে রয়েছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করা; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ রাজনীতির ধারাবাহিক চর্চার কারণে গড়ে উঠেছে। এখানে অনেকগুলো কারণ জড়িয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। তবে প্রধান ও উৎস কারণ- দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির তথাকথিত রাজনীতি। তাই সমস্যাটির সমাধান করতে হলে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দেশের সুসম ও টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেজন্য জাতীয় স্বার্থেই সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের মনোযোগী হওয়া উচিত।