করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্স থেকে সারাদেশে চলছে সাধারণ ছুটি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি এ ছুটি চলাকালীন সময় সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও রমজান মাসের কথা চিন্তা করে সরকার গেলো ১০ মার্চ থেকে সীমিত পরিসরে দেশের মার্কেট-শপিং-মল, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সরকার অনুমতি দিলেও সিলেটের ব্যবসায়ীরা জনস্বার্থে ঈদের আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিং-মল না খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
সিলেটের ব্যবসায়ীদের এ সিদ্ধান্ত সর্ব-মহলে প্রশংসিত হয়। নিজেদের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় সিলেটের ব্যবসায়ীদের মানুষ সাধুবাদ জানান। করোনাভাইরাসের সংকটের সময় তাদের এই নিঃস্বার্থ ত্যাগকে অনেকেই মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলেও অভিহিত করেন। তবে তাদের এই উদ্যোগকে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, কালিমা লাগিয়েছে বন্দরবাজারস্থ হাসান মার্কেট, হকার্স মাকের্টসহ নগরীর বিভিন্ন একক প্রতিষ্টানগুলো।
সিলেটের ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ১২ মে মঙ্গলবার সকাল থেকেই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে ক্রেতারাও মার্কেটে ভিড় করেছেন। একেক দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে ভেঙ্গে পড়েছিল সামাজিক দূরত্ব। এতে করে সিলেটজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর ১৪ মে (বৃহস্পতিবার) সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভবনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
তবে সেই ঘোষণার তিনদিন পরই আবার ১৮ মে থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকেই হাসান মার্কেটসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে দোকানপাট খুলতে শুরু করে।
আর মানুষ করোনাভাইরাসে ভয় উপেক্ষা করে মার্কেটগুলোতে ভিড় করছে। এতে ভেঙ্গে পড়েছে সামাজিক দূরত্ব। অন্যদিকে সিলেটে দিনদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। অথচ প্রথম দিকে সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল। আর এখন সবচেয়ে বেশি রোগী সিলেট জেলায়। এরমধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, পুলিশসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।
তবে পুলিশ বলছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে, রাস্তায়, পয়েন্টে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহবান জানিয়ে বিলবোর্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত আছে।
আর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সরকার যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে আমরা কাউকে জোড় করতে পারি না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য। তবে সিলেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা সিলেটের মানুষের
কথা চিন্তা করে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। আর যারা খোলা রেখেছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি-না তা প্রশাসন দেখবে। তবে আমাদের আহবান হলো সাধারণ মানুষ সচেতন হতে হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা বলেন, আমরা প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। এছাড়াও মানুষকে সচেতন করতে নগরীতে বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে সবকিছুর পরেই মানুষকে সচেতন হতে হবে। কারণ মানুষ সচেতন না হলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা কঠিন হবে। কারণ সিলেটে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। সেজন্য আমি সিলেট নগরবাসীর কাছে অনুরোধ করবো আপনারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আবু তাহের মো শোয়েব বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছিল। আবার যেকোনো কারণেই হোক সরকার তা খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা সিলেটের ব্যবসায়ীরা সিলেটের মানুষের কথা চিন্তা করে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও দোকানপাট বন্ধ রেখেছি। কারণ বেঁচে থাকলে ব্যবসা, ঈদ সবই পাওয়া যাবে। আগে বেঁচে থাকতে হবে।
কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যদি প্রত্যোক ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা বা ব্যবসা অনুযায়ী টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রণোদনা দিতো তাহলে ভালো হতো। কারণ তখন ব্যবসায়ীরা ঘর ভাড়া, ইলেক্ট্রনিক বিল, কর্মচারীর বেতনসহ সবকিছু ভালোভাবে দিতে পারতো। এসব কারণসহ আরও নানা কারণে কিছু ব্যবসায়ী দোকান খুলেছেন। আমরা তাদেরকে অনেকবার বুঝিয়েছি, কিন্তু তারা সেটি মানেন নি। এরবাইরে আমরা দোকান বন্ধ করার জন্য কাউকে জোড় করতে পারি না।
তবে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, এবার ঈদ গেলে আরও ঈদ আসবে। কিন্তু আপনি মারা গেলে কিংবা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেলে কী হবে? সেজন্য আমরা বলছি আপনারা ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন। কারণ বেঁচে থাকলে