ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা আইন-কানুনে বস্তুগত সম্পদের মালিকানাটা নিজেরা রাখতে পারছি; কিন্তু মেধাস্বত্ব আমরা এখনো নিজের করে রাখার ব্যাপারে যতœশীল নই। কপিরাইটের ব্যাপারে নিজেদের অনেক অনাগ্রহ লক্ষ্য করছি।
এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইনোভেশন ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ইনোভেশন সংরক্ষণের বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে মোবাইল অপারেটর রবির প্রধান কার্যালয়ে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেড আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের গুরুত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, মেধাসম্পদ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের হয়রানি কমাতে এবং আগ্রহ বাড়াতে সংস্কৃতি ও শিল্প মন্ত্রণালয় নয়, একক আইপি অফিস থাকা উচিত। যেখান থেকে একসঙ্গে কপিরাইট ও পেটেন্ট সনদ নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট মেধাস্বত্ব দিচ্ছি, কিন্তু আর্টিফিশিয়াল মেধার অনুমোদন নেই। এ জায়গায়ও কাজ করা জরুরি। কপিরাইট আইন এখন সংশোধন হচ্ছে, এ সময়েই আর্টিফিশিয়াল বা রোবটিকস মেধার কপিরাইটটা কী হবে- তা ঠিক করে নিতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মসহ যেকোনো প্ল্যাটফর্মেই যা তুলে ধরবেন, তার দায় আপনাকে নিতেই হবে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা রোবট কোনো মেধাজাত কিছু তৈরি করল। তাহলে সে সম্পদের মালিকানা কার হবে- তা নির্ধারণ করা জরুরি। শুধু মানুষের তৈরি মেধাসম্পদের কথা ভাবলে চলবে না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে তা এখনই ঠিক করতে হবে। আর তা না হলে এই মালিকানা কার হবে এটা ঠিক করতে হয়ত এক দশক সময় লেগে যাবে।
অনুষ্ঠানে রবির সিইও রাজীব শেঠী বলেন, করোনাকাল থেকে এখন পর্যন্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি হলো সবচেয়ে লাভজনক খাত। তাদের আইপিআর খুব শক্ত। এ সময় টেকনোলজির ওপর গুরুত্বারোপ করে রাজীব শেঠী বলেন, কপিরাইট, পেটেন্ট আইনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে; যাতে অন্যরা আমাদের স্বত্ব নিয়ে নিতে না পারে।
টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিসবাহ। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন অবস্থান করছি। সেখান থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। আমাদের প্রযুক্তিগত ও তথ্যগত ডাটা বিশ্লেষণ করে জনগণের বিশেষ করে তরুণদের জন্য সরকার যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, সেখান থেকেই স্মার্টনেসের উদ্ভব হবে। ডাটা সংরক্ষণ, মেধাস্বত্ব, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস- ভাস গাইডলাইন, ওটিটি রেগুলেশন ইত্যাদির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি।
মূল বক্তব্যে আরও তুলে ধরা হয়- স্মার্ট ডায়নামিক্সের জন্য আইনি কাঠামো, বন্ধুত্বমূলক রেগুলেটরি নীতি, স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করা, স্মার্ট মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।
আলোচনায় কপিরাইট নিরীক্ষক সৈয়দা নওরীন জাহান নিশা বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে ডিজিটাল কনটেন্ট রেজিস্ট্রেশন চলছে; কিন্তু যখন আর্থিক বিষয়টি আসে, তখনই দ্বন্দ্বের শুরু। বর্তমান কপিরাইট আইন দিয়ে এগুলো কাভার দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আগের আইনটি সংশোধন করে ইতোমধ্যে কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে।
বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, কপিরাইট নিয়ে কথা হলেও পেটেন্ট নিয়ে তেমন কথা হয় না। আইপিআর নিয়ে তেমন পরিষ্কার কোনো ধারণা দেওয়া হচ্ছে না।
এ সময় তিনি কিছু প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে কপিরাইট কেন নয়? কপিরাইট শুধু গান, নাটকের জন্য কেন? কেন আমার প্রোডাক্টের জন্য নয়?
অনুষ্ঠান শেষে রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে টিআরএনবি সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও রবির সিইও রাজীব শেঠী।