যুক্তরাষ্ট্রেকোভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘জরুরী প্রয়োজনে’ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ রেমডেসিভির বাংলাদেশেও উৎপাদন করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত আটটি ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে ঔষধটি উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, স্কয়ার, এসকেএফ, বিকন, হেলথ কেয়ার, পপুলার ও অপসোনিন।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমীন জানিয়েছেন, এসকেএফ, বেক্সিমকো ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস রেমডেসিভির উৎপাদন শুরু করেছে।
তিনি জানান, শুক্রবার এসকেএফ এরইমধ্যে ঔষধের দুটি ব্যাচ উৎপাদন করেছে। রোববার তারা ঔষধের নমুনা জমা দেবে।
“নমুনা জমা দেওয়ার পর আমাদের এখানে টেস্ট হবে। ফলাফল সন্তোষজনক হলে তাদের মার্কেটিং অথোরাইজেশন দেওয়া হবে। অথোরাইজেশন সনদ পাওয়ার পর তারা বাজারজাত করতে পারবে।”
তিনি জানান, সবগুলো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত রেমডেসিভির ওষুধের অনুমোদনের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এ মাসের শেষের দিকে ঔষধটির ব্যবহার শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রুহুল আমীন জানান, দেশে উৎপাদিত রেমডেসিভির ঔষধটি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে দেবে। যদি বেসরকারি হাসপাতালে দিতে হয় তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ঔষধ কোম্পানিগুলো তা করতে পারবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেমডেসিভির ঔষধের প্রতি ডোজের দাম পড়বে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মতো। পূর্ণ বয়স্ক একজন রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ ডোজ ঔষধ ইনজেকশনের মাধ্যমে দিতে হয়।
এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম শুক্রবার জানান, রেমডেসিভির ঔষধটি এখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারে পাঠানো হবে। সেখানে মানোত্তীর্ণ হওয়ার পর বিপণন সনদ পাওয়া যাবে।
“আমরা বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান যারা এই ঔষটি উৎপাদনের সবগুলো ধাপ শেষ করতে পারলাম। আশা করছি, আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ করে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ঔষধ ডিস্ট্রিবিউশন কার্যক্রম শুরু করতে পারব।”
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা জানান, তারাও রেমডেসিভির উৎপাদন শুরু করেছেন।
ঔষধটি উৎপাদনের কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি রাব্বুর রেজা।
তবে বেক্সিমকোর এই কর্মকর্তা জানান, “আমরা আশা করছি, এ মাসেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে ঔষধটি বাজারজাত করতে পারব। শুরুতে আমরা বাংলাদেশেই এটি সরবরাহ করব। বাংলাদেশ আমাদের প্রয়োরিটি। আমরা দেখব এখানে কতটুকু ঔষধ দরকার।”
তিনি বলেন, এটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারকে দেবেন তারা। সরকারের অনুমতি পেলে তা বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরবরাহ করা হবে।
ঔষধের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাব্বুর জো বলেন, এই দাম রোগীর ওপর প্রভাব ফেলবে না। তারা চেষ্টা করবেন দাম আরও কমাতে।
“এটা যেহেতু সরকার দিচ্ছে সে কারণে রোগীর ওপর এটার প্রভাব পড়বে না। প্রত্যেকটা ঔষধ বাজারজাত করার আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী একটা দাম নির্ধারণ করতে দিতে হয়। কিন্তু এটা এই ঔষধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
“আমরা যখন সরকারকে দেব তখন হয় ফ্রি দেব, না হয় একটা রিজনেবল প্রাইসে আসব আমরা। তবে একটা পর্যায়ে যখন সরকারের আর প্রয়োজন পড়বে না তখন আমরা বাজারে ঔষধটা দেব। তখনও চেষ্টা করব বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে ঔষধটি দেওয়ার জন্য।”
রেমডেসিভির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়ে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির জানান, “আমাদের এখানে এক্সপেরিমেন্ট চলছে। কোনো একটা পর্যায়ে যদি ঠিক না হয় তাহলে আবার সেটা করতে হবে। এ কারণে সময়টা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ অতি দ্রুততার সঙ্গে এটি দিয়ে দিতে পারব।”
এই ঔষধ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রেও কোম্পানি গিলিড সায়েন্সেস। নানা আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন-এফডিএ গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় জরুরী প্রয়োজনে ঔষধটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
রেমডেসিভির তৈরি হয়েছিল ইবোলার চিকিৎসার জন্য। গত ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছিল, হাসপাতালে রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গের স্থায়িত্ব ১৫ দিন থেকে কমে ১১ দিনে নেমেছে।
বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলকে ‘দুর্দান্ত’ বলে স্বাগত জানালেও বলেছিলেন, এ ঔষধ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ‘ম্যাজিক বুলেট’ হবে না, সেটাও মনে রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) পরিচালিত ওই পরীক্ষায় এক হাজার ৬৩ জন রোগীকে এই ঔষধ দেওয়া হয়। তবে মৃত্যু ঠেকাতে এ ঔষধের প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়।
রেমডেসিভির পাওয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ৮ শতাংশ এবং অন্যদেও ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ। ওষুধ এই পার্থক্য তৈরিতে কোনো ভূমিকা রেখেছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
ঔষধ শিল্পে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মেধাস্বত্ব-সম্পর্কিত চুক্তির বিধিবিধান বা ট্রেড রিলেটেড অ্যাস্পেক্টস অব ইন্টেলেক্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস (ট্রিপস) চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আইনগতভাবে ওষুধটি তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৩৪ জনের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ২০৬ জনের। তবে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, গত ২৪ ঘণ্টায়ই আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৯ জন।