শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আপন দৃষ্টি ৫৯

‘জয়বাংলা’ কি কোনো দলীয় স্লোগান?

আব্দুল মালিক

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক
  • ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ, ১১ আগস্ট ২০২১

একজন পুলিশ অফিসারের জয়বাংলা বলা কি অপরাধ? আমি মনে করি জয়বাংলা আমাদের জাতীয় স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় নেতা। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই দুইটিকে দলীয় উর্ধ্বে রাখতে হবে বলেও মনে করি। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সব জায়গায় যদি জাতীয় পতাকা ও বঙ্গবন্ধু থাকতে পারে তবে জাতীয় স্লোগান কেন থাকবে না?

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে জিন্দাবাদের বিরুদ্ধে। যারা জয়বাংলা বলেছে, সাথে সাথে গুলি করে তাদের বুক ঝাঁজরা করে দিয়েছিল পাকবাহিনী। পাকবাহিনী দেখার সাথে সাথে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়া হত। তখন মানুষ বুঝতো পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বলে তাহলে তাদের মেরে ফেলা হবে। তাই জীবন বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে মানুষ বলতে বাধ্য পাকিস্তান জিন্দাবাদ। তখন পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বললে তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার ছিল না। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু যারা বলেছে তাদের বংশ নির্বংশ করা হয়েছে। যে সকল মুক্তিযুদ্ধারা পাকবাহিনীর হাতে যারা ধরা পড়েছিল তাদেরকে টর্চার করে গালী দেয়া হত “শালা জয়বাংলা বলতাহে”।

বঙ্গবন্ধু ও জয়বাংলা শ্লেগান শুধু কোন দলের শ্লোগান নয় এ স্লোগানটি মুক্তিকামী বাঙ্গালীর। জয়বাংলা বাংলাদেশ জন্মের স্লোগান। জয়বাংলা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জয়বাংলা স্বাধীনতার স্লোগান। জয়বাংলা বাঙ্গালীর মুক্তির স্লোগান। জয়বাংলা সারা বাংলাদেশের স্লোগান। এটা আমাদের জাতীয় স্লোগান।

১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানের পর ছাত্ররা জয়বাংলা ছাড়া জিন্দাবাদ স্লোগান দেয় নাই। ১৯৭০ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানেও ছিল জয়বাংলা স্লোগান।

কেউ যদি বলে শেখ মুজিব জিন্দাবাদ বলেছেন, এটা তাদের বানানো মিথ্যা অপপ্রচার। তবে হে বঙ্গবন্ধুও জিন্দাবাদ বলেছেন, এটা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগের। এটাকে অপপ্রচারকারীরা এখন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের সাথে যুক্ত করে প্রচার করছে। আবার আরেকটা ভিডিও দেখেছি মিথ্যাবাদীরা ২৫শে মার্চের কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে ম্যাগাফনের মাধ্যমে জয়বাংলা স্লোগান দিয়েছিলেন কিন্তু মিথ্যাবাদীরা সেই আগের জিন্দাবান স্লোগানটি এনে এখানে যুক্ত করে দেখাচ্ছে।

একমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির এই অপপ্রচারে ব্যাস্ত। পরবর্তিতে বিএনপিও এসে যুক্ত হয়েছে। এদের মুল উদ্দেশ্য ছিল, যে জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানের ঐক্যের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই ঐক্যে ফাটল ধরানো। সেই সাথে দেশের এক জনগোষ্টিকে স্বাধীনতার মুল নীতি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো এবং তারা অনেকটা সাফল্য হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এখনও বেঁচে থাকা সেই দিনের একমাত্র রাজ সাক্ষী তোফায়েল আহমেদ বার বার বলে আসছেন ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান জয়বাংলা দিয়ে শুরু করি। সুতারাং আর বিভক্তি ও মতপার্থক্য দেখতে চাই না। গত ৫০ বছরের এই বিভক্তির অবসান চাই এবং জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে আগামী প্রজন্মকে মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাওয়া দেখতে চাই।

সব শেষে আবারও বলতে চাই। জয়বাংলা এদেশের মানুষের ঐক্যের স্লোগান, আমাদের অস্বিত্বের স্লোগান, এ স্লোগান আমাদের জাতীয় স্লোগান।


অন্যান্য খবর