ঢাকা-সিলেট রেলপথে বারবার ট্রেন লাইনচ্যুত হচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেন, কখনও তেলবাহী ট্রেন কিংবা মালবাহী ট্রেন। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ, আহত হচ্ছেন, কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। এতো সব দুর্ঘটনার পরেও এই রেলপথ সংস্কারে নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ।
তবে রেল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেলপথটি বেশ পুরনো। রেলপথটি সংস্কার করে বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করার জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নতুন করে রেলপথটি বানানো হলে ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রীরা উন্নত ও নিরাপদ রেলসেবা পাবেন।
এদিকে সবশেষ শুক্রবারও (৫ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তেলবাহী একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে ট্রেনের ৭টি বগি একেবারেই দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আর বগিতে থাকা তেলগুলো আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন এসব তেল নিয়ে যান।
এর আগে ২০২০ সালে সিলেটের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় চারটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এরমধ্যে ১০ মার্চ হবিগঞ্জের মাধবপুরের মনতলায় সুরমা মেইল ট্রেনের বগি, ১৫ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ার ভাটেরা স্টেশনে তেলবহনকারী ট্রেনের বগি, ১১ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলে তেলবাহী ট্রেন আর ৭ ডিসেম্বর মাধবপুরের শাহজীবাজারে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই রেলপথে শুধু লাইনচ্যুতির ঘটনাই ঘটেছে নয়টি। এরমধ্যে ২০১৯ সালের ১৬ মে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন, ২ জুন শায়েস্তাগঞ্জে কুশিয়ারা এক্সপ্রেস, ২০ জুলাই একই স্থানে কালনী এক্সপ্রেস, ১৯ জুলাই কুলাউড়ায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ৪ সেপ্টেম্বর ও ১৬ আগস্ট একই এলাকায় উপবন এক্সপ্রেস, ১৭ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জে জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ৪ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ২৯ ডিসেম্বর কুলাউড়ার বরমচালে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
অন্যদিকে দেশের অন্যান্য রেলপথের চেয়ে ঢাকা-সিলেট রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে দুর্ঘটনার হার তুলনামূলক বেশি। তবে কেন এই রেলপথে বারবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ।
তবে কুলাউড়ায় উপবন এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য আখাউড়া-সিলেট রেলপথে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। এর বাইরে তদন্তে ‘ওয়ে অ্যান্ড ওয়ার্কস ম্যানুয়াল এবং জেনারেল অ্যান্ড সাবসিডিয়ারি রুল’ অনুযায়ী রেলপথটি সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হন রেলকর্মীরা বলেও উঠে এসেছিলো। আর দুর্ঘটনার জন্য ‘রেলপথ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া’কে দায়ী করা হয় ওই প্রতিবেদনটিতে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানান, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এই সেকশনটির অনেক স্থানে একটা ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না। প্রয়োজন হলে ট্রেনের পেছনে আরও একটি ইঞ্জিন জুড়ে দিয়ে ট্রেন টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা করতে গিয়ে অনেক সময় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তখন লাইনচ্যুতিসহ ট্রেন দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়ে যায়।