সিলেট নগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছিল। দক্ষিণ সুরমার পারাইচক এলাকায় ৮ দশমিক ৪৪ একর ভূমিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করে।
তবে দীর্ঘদিন পর সিলেটে নির্দিষ্ট ট্রাক টার্মিনাল করা হলেও এখনও নগর থেকে সরেনি ট্রাক। এখন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ট্রাক পার্কিও করে রাখা হচ্ছে। এতে একদিনে যেমন নগরীতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে নগরের সৌন্দর্য।
তবে সিলেট ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও এখনও টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গ হয়নি। শুধুমাত্র চারদিকে দেয়ার আর মাটি ভরাট করে দিলেই তো ট্রাক টার্মিনাল হয়ে যায় না। এখানে গাড়ির মেরামতের সুযোগ-সুবিধা নেই, নেই খাবার হোটেল।
র বাইরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নেই ট্রাক টার্মিনালে। কারণ একটি ট্রাকের চাকায় বাতাস দিতে হলেও ড্রাইভারকে হুমায়ুন রশীদ চত্বরে যেতে হয়। খাওয়ার জন্য যেতে হয় প্রায় দুই কিলোমিটার। এতে যাওয়া-আসায় ভাড়া গুনতে হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এসব বিষয় সমাধান করা প্রয়োজন। তা না হলে শুধু মাটি ভরাট করে দিলেই তো গাড়ির ড্রাইভাররা টার্মিনালে গাড়ি রাখবেন না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দিতে হবে।
সিলেট ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা আরও বলছেন, সিলেট জেলায় ট্রাকের সংখ্যা চার হাজারের মতো। এর বাইরে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্য নিয়ে শত শত ট্রাক নগরীতে প্রবেশ করছে। টার্মিনালের কাজ দীর্ঘদিন পরে শেষ হলেও নানা অসুবিধার কারণে এখনও নগরের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক পার্কিং করতে হচ্ছে।
আর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, সিলেট নগরীতে অবৈধভাবে ট্রাক পার্কিং করলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযানের পরপরই আবার ট্রাক পার্কিং করা হয়। এজন্য ট্রাক টার্মিনালকে যুগোপযোগী করতে হবে। তখন পুলিশও তাদেরকে টার্মিনালে যাওয়ার জন্য ফোর্স করতে পারবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে সিলেট ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। ওই বছরই দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনের জন্য ৯ দশমিক ৫১ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। এরপর সিসিক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মন্ত্রণালয় ওই ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি দিলে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০০৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় পাশের আবাসিক প্রকল্প সাউথ সুরমা সিটি লিমিটেড।
এই প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ট্রাক টার্মিনালের জন্য অনুমোদিত ভূমির মধ্যে ৫ দশমিক ৮ একর তাদের দাবি করে হাইকোর্টে রিট করে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট তাদের দাবিকৃত জমির ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এতে টার্মিনাল নির্মাণকাজ থমকে যায়।
এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন আরেকটি জমিতে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু করে সিসিক। দক্ষিণ সুরমায় পারাইরচক এলাকায় ৮ দশমিক ৪৪ একর ভূমিতে টার্মিনালের কাজ শুরু হয়। আরসিসি রিটেইনিং দেয়াল, টার্মিনালের প্রবেশ মুখে একটি বক্স কালভার্ট, পার্কিং এলাকার উন্নয়ন, আরসিসি অ্যাপ্রোচ সড়ক, সীমানা প্রাচীর, টার্মিনালের ভেতরে অভ্যন্তরীণ ড্রেন, সেমিপাকা কাউন্টার, আরসিসি পাইপ ড্রেন, একটি গভীর নলকূপ এবং একটি সেফটিক ট্যাংক নির্মাণ শেষে ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর ট্রাক টার্মিনালটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার বলেন, আমরা সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে বলেছি- শুধু মাটি ভরাট করে দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করলে হবে না। বরং ট্রাক টার্মিনালকে আধুনিকায়ন করে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে ড্রাইভাররা কেন গাড়ি নিয়ে সেখানে যাবেন।
আর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, আমরা নগরে অবৈধ পার্কিং বন্ধে কাজ করছি। তবে সিলেটে ট্রাক টার্মিনাল হলেও এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব বলে শ্রমিকরা সেখানে গাড়ি নিয়ে যেতে চান না। ট্রাক টার্মিনালে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে ট্রাক ড্রাইভাররা স্বাচ্ছন্দ্যে সেখানে যেতে পারেন। আর আমরাও তাদেরকে যাওয়ার জন্য জোর দিতে পারি।