শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আপন দৃষ্টি ৫০

ধর্মের নামে আর উস্কানি নয়, মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস বলুন

আব্দুল মালিক

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক
  • ১:০৬ পূর্বাহ্ণ, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

স্বাধীনতার ৫০ পূর্তিতে হৃদয় থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। আজ পবিত্র কোরআন ও ইসলামকে সামনে রেখে ওয়াজ মাহফিলের নামে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে, সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিয়ে, উত্তেজিত করে কি বলা হচ্ছে? মুক্তিযোদ্ধের সময় তৎকালিন জাতীয় নেতারা নাকি কলকাতায় বসে মদ আর নারী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন? বঙ্গবন্ধু নাকি জীবন বাঁচাতে পাকিস্তানের কারাগারে আরামে ছিলেন।

আমি বলি না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়ে পাকিস্তানের কারাগারে আারামে ছিলেন না। তাঁকে পাকিস্তানিরা ফাঁসি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীদের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। ফিরে আসেন এদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ভালবাসার মানুষ হৃদয়ের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু যখন পাতিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুর তৎকালিন নেতারাই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ঝড়, বৃষ্টি, কাঁদায় একাকার হয়ে কাজ করছিলেন এই নেতারা। বাসয় বসে বিশ্রাম করেননি।

মুজিবনগর সরকার গঠন থেকে শুরু করে, পরিবারের ছেলে মেয়ে মা বাবা ভাই বোন সবাইকে ছেড়ে কখনও হাজার হাজার শরণার্থীদের পাশে, কখনও মুক্তি যুদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে, কখনও বিদেশীদের সাথে সাক্ষাৎকার, আবার কখনও বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে। স্বাধীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন নিজের কাপড়টা পর্যন্ত নিজে ধুয়ে দিতেন।

অনেক মুক্তিযুদ্ধার মুখে শুনেছি, মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণী উসমানীকে এক রাতের জন্য কেউ ঘুমাতে দেখেনি। মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একটি ছুট খাটের উপর বসে নতুন সরকারের কাগজ পত্রে লেখালেখি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি সেক্টরের অধিনায়কদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে, যুদ্ধের ব্যাপক ও জোরদার এবং তরান্বিত করতেন।

আজ মুক্তিযুদ্ধের ৫০বছর পর বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজের মাধ্যমে পবিত্র কোরানকে সামনে রেখে যখন কোন আলিম ওলামা নামের কিছু মানুষ বলে, জাতীয় নেতারা নাকি কলকাতায় বসে মদ আর নারী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, আর গরীব দুঃখীরা মরে মরে ভাগ্য ভাল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েগেছে। অতচ তাদের মত একজন মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীও মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে রণাঙ্গনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৭১এর পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধী জামাত ইসলামের নেতা গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিল এবং সেই সাথে জামাতের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আমরা দুর্ভাগ্য হলেও সত্য ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে সেই জামাতের রাজনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠাসহ গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরু করে।

সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অন্যান্য ৭১ এর সুবিধাবাদী ইসলামিক দল গুলিও আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরানকে সামনে রেখে মুক্তি যুদ্ধের নেতৃত্বকে বিকৃত করছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে জাতীয় সঙ্গীতকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করে।

যে চার মৌলিক বিশ্বাসে ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সকল ধর্মের অংশ গ্রহণে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা এই আদর্শ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। এই জন্যই হয়ত আজ ধর্মীয় ধাঙ্গার কাছাকাছি বাংলাদেশ। এর পিছনে ইন্দন যোগাচ্ছে বিএনপির সাথে একাত্তরের পরাজিত শক্তি।

এখন যুক্ত হয়েছে হেফাজত আর চরমোনাই, আমার প্রশ্ন জাগে ওরা কি ৭১ এ যুদ্ধ করেছিল? মামুনুল হক, ফয়জুল করিম ও এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী তখন কি করেছিল? আজ ওয়াজের নামে সারা বাংলাদেশে ৭১ এর ইতিহাস বিকৃত করে যাচ্ছে। এটা কি অপরাধ নয়?

আজ একবারও বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা স্বীকার করে না বরং আমাদের বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যে সকল জাতীয় নেতা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাদের সম্পর্কে কোরুচিপূর্ণ বক্তব্য যারা দেন, তারাই রাজাকার, তারাই স্বাধীনতাবিরোধী? আজ স্বাধীনতা বিরোধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।


অন্যান্য খবর