পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন বলেছেন, সিলেটের আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয় উজানের পাহাড়ি ঢলে। তাই সেখানকার বন্যার পূর্বাভাস বাংলাদেশকে আগাম জানানো ও ড্যামগুলো উন্মুক্ত করার আগে বাংলাদেশকে অবহিত করার কথাও ভারতকে প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে ভারত নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সিলেটে জেলা পরিষদের আয়োজনে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এমনটি জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকারের আমন্ত্রণে আগামী মাসের ৪-৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাবেন। সেই সফরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়গুলো প্রধান্য পাবে। সেখানে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনায় আসবে।
মোমেন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আলোচ্যসূচী এখন চূড়ান্ত না হলেও, দু-দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে; এমনটা জানান ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদীগুলো খননের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১০-১২ বছর বিরতির পর এমাসের শেষের দিকে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে ৬ টি নদীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে; উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সবকটি নৌপথ আগের মতো সচল করতে চায়; সেই বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেনের একটি মন্তব্যকে ঘিরে শুক্রবার দিনভর চলে আলোচনা সমালোচনা। গতকাল শনিবার নিজের এই বক্তব্যের ব্যাখা দেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে তার বক্তব্যকে সাংবদিকরা টুইস্ট করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গত শুক্রবার সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ‘ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ক’ মতবিনিময় সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। আমরা সুখে আছি, বেহেশতে আছি। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে; একটি পক্ষ এমন প্যানিক ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এটার কোনো ভিত্তি নেই। তবে আমরা এ মুহুর্তে চ্যালেঞ্জে আছি। বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমরাও কিছুটা সংকটে। কিন্তু আমাদের যথেষ্ট রিজার্ভ আছে। আগাম সতর্কতা হিসেবে আমরা কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করছি।’
চলমান নানা সংকটের মধ্যে মন্ত্রীর ‘সুখে আছি, বেহেশতে আছি’ মন্তব্য ঘিরে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয় তার এই মন্তব্য নিয়ে।
এ অবস্থায় শনিবার দুপুরে সিলেটে জেলা পরিষদের আয়োজনে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের আগের দিনের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আগের দিনের মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বেহেশতের কথা আমি বলেছি, কম্পারেটিভ টু আদার কান্ট্রি (অন্য দেশের তুলনায়)। আর আপনারা সব জায়গায় লিখেছেন ‘বেহেশত বলেছেন’…মানে টুইস্ট করা হয়েছে। …বলেন নাই যে আমাদের মূল্যস্ফীতি অন্য দেশের তুলনায় কম…।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি ইংল্যান্ডে ১২ ভাগ, টার্কিতে ৬৭ ভাগ, পাকিস্তানে ৩৭ ভাগ, শ্রীলংকায় ১৫০ ভাগ, আর আমরা ৭ ভাগ… সেই দিক দিয়ে আমরা ভালো আছি।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমি বলেছি, অন্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। এবং তাদের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি, এই কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা (সাংবাদিকরা) এক্কেবারে উল্টা!’