বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মানুষের কাছে মুরারিচাঁদিয়ান


উদ্যোগটা সাদামাটা। সম্মিলিত। আর দশ জনের মতই। তবু কোথাও একটা অন্যরকম বোধ যেনো খুঁজে পেয়ে যান উদ্যোক্তারা। সংখ্যাটা তাই পরিকল্পনাধীন ষাটে আর থেমে থাকেনি। এটি গড়ায় ৬০ ছাড়িয়ে ৮০ তে, পরে শ’য়ের কোটায়। সেখান থেকে সোয়া শ’তে। এবং তা ক্রমে বেড়েই চলেছে।

এই করোনাকালে যৎসামান্য খাদ্য সাহায্যের ইচ্ছা নিয়ে ৬০ টি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল উদ্যোক্তাদের। প্রাক কথা এমনটা থাকলেও দাতাদের নিঃস্বার্থ সাড়া অব্যাহত থাকায় সহায়তাটি নিয়মিত চালু রাখার কথাই ভাবছেন উদ্যাক্তারা। এই ভিন্ন সহায়তাকারী উদ্যোক্তা দলের নাম- মানুষের কাছে মুরারিচাঁদিয়ান।

জানা যায়, এখন পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত মোট ১শ ২৫ টি পরিবারের কাছে ছুটে গিয়েছেন এমসি কলেজের ১৯৯৯-২০০০ সম্মান বর্ষের ক’জন মানবিক বন্ধু। উদ্দেশ্য তাদের প্রচারণা না। তাই নাম প্রকাশ করতে একেবারেই অনিচ্ছুক তারা। টানাননি কোথাও ব্যানার, ফেষ্টুন। এমনকি এই সংবাদটিও প্রকাশে অনিহা তাদের।

শুধু এরকম উদ্যোগে অন্যদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ হতে পারে বলে সংবাদ প্রকাশে মত দেন তারা। উদ্যোক্তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, নিভৃত এ উদ্যোগের শুরুটা হয় মুলত ‘মানুষের কাছে মুরারিচাঁদিয়ান’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে। লকডাউনের এ বদ্ধ সময়টায় উদ্দেশ্য ছিল তাদের নিছক আড্ডাই।

দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের এক ফ্রেমে নিয়ে যেনো নষ্টালজিক এক ভারচুয়াল আড্ডায় মেতে ওঠেন বন্ধুরা তাদের ক্যাম্পাস ছাড়ার দীর্ঘ ২০ বছর পরে। গ্রুপে একে একে যুক্ত হতে থাকেন পরিচিত মুখ ফেসবুক বন্ধুরা। দিন গড়ায়। পার হতে থাকে আড্ডায়, গানে, গল্পে অলস সময়। কথায় কথায় তাদের মধ্যে জেগে ওঠে মানবিক বোধও। ফলে প্রবাসে থাকা বন্ধুরা বিশেষ করে আসেন এগিয়ে। শুরু হয় তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা।

তাদের অংগিকার যেনো পুরুষ্টু হতে থাকে ক্রমে। সপ্তাহান্তেই তহবিল বড় হয়ে দাঁড়ায় লক্ষাধিক টাকার সংখ্যায়। আরো আসে অনুদান। সাড়া দেন ইউরোপ, আমেরিকায়, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা ৯৯-০০ সালের এমসি কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা। তহবিল প্রসারিত হতে থাকে। দেশে থাকা বন্ধুরাও তাদের সামর্থ অনুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়ে ধরেন।

পাশাপাশি তারা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের তালিকাও তৈরী করতে থাকেন। এই সুবিধাভোগীরাও আবার নিতান্তই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ; যারা ত্রাণ নিতে আসেন না জনসমক্ষে। মধ্যবিত্ত, মোটামোটি চাকুরি বা ক্ষুদ্র ব্যবসায় নুন-পান্তা খেয়ে যাদের কাটছিল দিনকাল তারা এখন ক্ষুধায় কাতর। লোকলজ্জায় উপোষ করা মানুষের কষ্টে সাড়া দিতে তাই মানুষের কাছে মুরারিচাঁদিয়ানরা।

খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনে অর্থ সহায়তাও দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান উদ্যোক্তারা। জানিয়েছেন, এ সহায়তা তারা জনমানুষের কাছ থেকেও নিতে সম্মত না। নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সহায়তার মাত্রা অব্যাহত রাখতে এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হবার উদাত্ত আহবান তাদের শুধুই ১৯৯৯-২০০০ সালে এমসি কলেজে অনার্স পড়ুয়া বন্ধুদের প্রতিই। তার পাশাপাশি এরকম আরও স্বতন্ত্র উদ্যোগ নিয়েই সবাই মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই আড্ডাবাজ উদ্যোক্তারা।

 

লেখক : জিল্লুর রাহমান জয়
উন্নয়নকর্মী


অন্যান্য খবর