সোমবার (২৫ মে) দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। মুসলিম উম্মাহ’র বড় ধর্মীয় উৎসব এবার করোনাকালে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে উদযাপন হচ্ছে। অথচ অন্যান্য-বছর বিপুল উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশের মানুষও।
দেশের ভ্রমণ-প্রিয় মানুষ ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েই বেড়িয়ে পড়েন পরিবার-পরিজন নিয়ে; কেউ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে আবারও কেউ দেশের বাইরেও যান বেড়াতে। সরকারি ছুটি আর ঈদের আমেজে সব মিলিয়ে মানুষ ছুটে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।বাদ পড়ে না প্রকৃতিকন্যার সিলেটও। সারাবছর পর্যটকদের পাদচারণায় মুখর থাকে পুণ্যভূমি সিলেট। তবে সেই পাদচারণা কয়েকগুণ বেড়ে যায় উৎসব-প্লাবনে। দেশের নানা প্রান্তের মানুষের ঢল নামে সিলেটে। সর্বশেষ গেলা ১৮ মার্চ সিলেটের পর্যটকদের আনাগোনা ছিলো।
বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেদিনই টুরিস্ট পুলিশ সিলেটের সকল পর্যটন স্পটে দর্শনার্থী আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এখনও। আর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে চলছে পিনপতন নীরবতা। থেমে গেছে সকল কোলাহল, বন্ধ রয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসা-বাণিজ্যও।
অথচ অন্যান্য-বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুই মাস আগে থেকেই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সিলেটের হোটেল-মোটেল বুকিং করে রাখতেন। পবিত্র রমজান আসার আগেই সিলেটের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে যেতো। কিন্তু এবার সবকিছু থমকে গেছে। থমকে গেছে ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও।
সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের প্রতি মাসে পর্যটনের কী পরিমাণ ব্যবসা-বাণিজ্য হয়, এটি কখনও হিসেব করা হয়নি। তবে সিলেটের অর্থনীতির বেশিরভাগই পর্যটন নির্ভর। কিন্তু দীর্ঘসময় পর্যটন-স্পট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
কেউ কেউ পথে বসার উপক্রম। আবার কবে অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এটিও এখনোও অজানা। এমন অবস্থায় পর্যটন শিল্প ঠিকিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ পর্যটনের এই বিশাল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দু’তিন বছর সময় লাগবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে যায় যায়, প্রতি ঈদে বিশেষ করে রমজানের ঈদে সিলেটে সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেখা যায়। গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, এবং কোম্পানীগঞ্জের সাদা-পাথর, সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগান, হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজারে পর্যটকরা যান।
প্রতি বছর ঈদের সময় কয়েক হাজার পর্যটক আগাম বুকিং দিয়ে রাখেন। কিন্তু এ বছর পর্যটকের সংখ্যা শূন্য। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পুঁজি হারানোর ভয়ে রয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি ও সিলেট হোটেল এন্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রপের সহ সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কবে পর্যটন স্পট খুলবে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘ সময় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও আনুসাঙ্গিক খরচ বাবত প্রতিমাসে বিশাল টাকা দিতে হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন দেয়া যাবে? আর সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত পর্যটন নির্ভর।
কবে পর্যটন-খাত স্বাভাবিক হবে সেটিও বলা যাচ্ছে না। আর এখন খুললেও আমাদের স্বাভাবিক হতে তিন-চারবছর লাগবে। এ কারণে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি, সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়ার জন্য। যদি সরকার সহজ শর্তে ঋণ দেয় তাহলে ব্যবসায়ীরা হয়তো ঠিকে থাকতে পারবেন।