বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

স্মরণ

‘সিলেটে গণমানুষের প্রাণ, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান’

আব্দুল মালিক

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক
  • ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ১৫ জুন ২০২১

সিলেটের গণমানুষের নেতার নাম সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। যিনি আপন মহিমায় আলো জ্বালিয়েছেন সর্বত্র। সিলেটে গণমানুষের প্রাণ, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তাঁকে নিয়ে সব সময় এই কথাটি বলতাম। জনসেবা আর রাজনীতি করে জনগণের হৃদয়ে কীভাবে ঠাঁই নেয়া যায় সিলেটের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান তাঁর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সকল মানুষের হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই করে নেয়া কামরান ভাইয়ের সাথে ছাত্র জীবন থেকেই আমার পরিচয়। আমার শিক্ষক ও মামা আ ন ম শফিকুল হক তখন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেই সুবাদে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভাইয়ের সাথে নানাভাবে সংস্পর্শ ছিল।

আমি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সংগ্রামী জীবনের অনেক কিছু অবলোকন করেছি। তাঁর সংগ্রামী জীবনের সাথে অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে বিলাত প্রবাসী হবার নানা ব্যস্ততায় অনেকদিন খুব একটা যোগাযোগ হয়নি। ১৯৯৬ সালে ডিসেম্বরে ওল্ডহ্যাম বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশনের ১৯ জনের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা সফরে বাংলাদেশে যাবে, আমিও সে প্রতিনিধি দলের সদস্য। কামরান ভাইয়ের সাথে আমার যোগোযোগ হল তিনি আমাদের দলকে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিলেন।

বাংলাদেশে যাবার পর সেদিন তিনি ওল্ডহ্যাম বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশনের এই দলকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিলেন, যুক্তরাজ্যের মাঠিতে বড় হওয়া সেই সময়ের এই তরুণরা এখনও তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে। একেবারে আপনজনের মত আমাদের নানা কাজে ভ্রমনে তাঁর ভুমিকা ছিল। প্রবাসীদের প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ মহত্ববোধ, আর সেই মহত্ব থেকেই শুধু আমাদের ওই দলটিকে নয়, প্রবাস থেকে যে কোনো প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে গেছে আর কামরান ভাইয়ের সহযোগিতা পায়নি তা কেউ বলতে পারবে না।

আমার জীবনের সব চেয়ে বড় সাফল্য, বাংলাদেশের বাহিরে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন। এই শহীদ মিনারের ইতিহাস নিয়ে আমার লিখা বইয়ের প্রথম ঢাকায় এর পর সিলেটের দ্বিতীয় গ্রন্থালোচনা অনুষ্টানের জন্য ছোট ভাই সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধরীর মাধ্যমে আমার অনুষ্টানের সভাপতির আমন্ত্রণ দিতেই তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। অনুষ্টান শেষে সেদিন কামরান ভাই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন। নিঃসন্দেহে বলতে পারি তোমার এবং ওল্ডহ্যাম বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশনের এই কর্মকান্ড ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।

সেদিনের এই অনুষ্টানেই তাঁর সাথে আমার জীবনের শেষ সভা। যদিও তিনি কিছুদিন আগে লন্ডন এসেছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত ওল্ডহ্যাম আসার কথা থাকলেও আসা হয়নি বিদায় আর দেখা হয়নি, আর দেখা হবেও না কোনো দিন। কামরান ভাই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কামরান ভাই আপনি না ফেরার রাজ্যে চলে গেলেও সকল প্রবাসীর হৃদয়ে আছেন। আপনার কর্মগুণেই আপনি সবার হৃদয়ে থেকে যাবেন সব সময়। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৫ জুন রাত পৌনে ৩টার সময় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক বন্ধু-বান্ধব, নেতাকর্মী ও প্রিয় নগরবাসীকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে।

সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী এই নেতা ছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সিলেটে সবার প্রিয়।


অন্যান্য খবর