প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ সিলেট। এক হাজার তিনশত বত্রিশ বর্গমাইলের এ জেলায় রয়েছে পাথর-বালুর খনি। আছে গ্যাসক্ষেত্র, চা-বাগান। পিছিয়ে নেই রেমিট্যান্স প্রদানেও। তবে প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা হিসেবে পরিচিত সিলেটে বিনিয়োগের জন্য নেই বড় কোনো প্রকল্প। নেই অনুকুল পরিবেশ। সেজন্য সিলেটবাসীর ‘অলস’ টাকা ব্যাংকে পড়ে থাকে। তৈরি হয় নান্দনিক বাড়ি, শপিংমল।
তবে এবার বিনিয়োগের সুযোগ আসছে সিলেটবাসীর। সিলেটের পাথররাজ্য হিসেবে খ্যাত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণাধীন ‘হাইটেক পার্ক, সিলেটে’ বিনিয়োগ করতে পারবেন সিলেটের মানুষ। উপজেলার বর্ণি গ্রামে প্রায় ১৬২.৮৩ একর জমির ওপর নির্মিত এ পার্কের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। আর সিলেট বিভাগের ফ্রিলান্সার ও আইসিটিখাতে জড়িত শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়ছে আশার আলো। খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য বর্তমানে বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে। বিনিয়োগকারী পেলেই হাইটেক পার্কটি পরিপূর্ণ হবে। হাইটেক পার্কে জ্ঞানভিত্তিক শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
আর সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, হাইটেক পার্কে সিলেটের মানুষকে কিভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা যায় সেই বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য সিলেটের প্রবাসীদের টাকা বিনিয়োগে আনতেও কাজ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, হাইটেক প্রকল্পে সিলেটিদের অগ্রাধিকার যেন দেয়া হয় সেই বিষয়ে আলোচনা হবে।
অন্যদিকে আইসিটিখাতে জড়িত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রকল্পটি দৃশ্যমান হওয়ায় আশার আলো বাড়ছে। যারা আইসিটিখাতে কাজ করতে চান তাদের জন্য এই হাইটেক পার্ক স্বপ্নের মতো। এখানে কাজ করার পাশাপাশি কাজ শেখারও সুযোগ রয়েছে। এতে নতুন-পুরাতন সবাই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন এ খাতে জড়িতরা।
এদিকে প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম সরওয়ার ভুঁইয়া বলেন, ‘হাইটেক পার্ক সিলেটে প্রায় ৩১ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট আইটি বিজনেস সেন্টার, ক্যাবল ব্রিজ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, গ্যাস লাইন স্থাপন ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির আরও বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে হাইটেক পার্ক সিলেট থেকেই সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও যন্ত্রাংশ তৈরি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে আমরা এখানে বিনিয়োগ করার মতো মানুষ খুঁজতে শুরু করেছি। কারণ এখানে সবাই বিনিয়োগ করতে পারেন। বিশেষ করে প্রবাসী সিলেটিরা এখানে বিনিয়োগের ধারুণ সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকে টাকা না রেখে মানুষ যাতে বিনিয়োগ করেন সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আর সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘প্রকল্পটি দৃশ্যমান হওয়ায় বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন। তবে আমরা চাইবো সিলেটের মানুষকে যাতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ বিষয় নিয়ে আমরা আগেও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি।
কিন্তু করোনার কারণে কথাবার্তা পুরোপুরি করা যাচ্ছে না। তবে আমরা শিগগিরই হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো। এছাড়া হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষও বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে সভা-সেমিনার কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকল্পের নানা সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি জানাতে পারে বলেও মত দেন ব্যবসায়ী এ নেতা।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, ‘সিলেটে এ প্রকল্পটি আইসিটিখাতে জড়িত সবার মাঝে আশার আলো হয়ে আসছে। বিশেষ করে আইসিটির শিক্ষার্থীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ থাকবে। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ শেখার সুযোগ রয়েছে। আবার যারা আইসিটির শিক্ষার্থী না হয়েও ফ্রিলান্সিং করছেন তাদের জন্য প্রকল্পটি ভালো কাজে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ফ্রিলান্সিং বা তথ্য-প্রযুক্তি-খাতে কাজ করতে আগ্রহী অনেক শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যখন পার্কটি হবে তখন তাদের শেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে। এতে শিক্ষার্থীরাও কাজ শিখতে আগ্রহী হবে। এছাড়া এই হাইটেক পার্কটিতে কাজ শুরু হলে সিলেটে আইসিটিখাতে শিক্ষার্থী বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ প্রকল্পটির অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী ইলেকট্রনিক্স সিটি ‘হাইটেক পার্কে’ আইটি বিজনেস সেন্টারের ভিত্তিপ্র¯Íর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।