হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় একটি চা বাগান শ্রমিকের এক শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় জেলার ২৩টি চা বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহতের চাচাতো ভাইও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় চা-শ্রমিক জনগোষ্টিতে আতঙ্ক যেনো আরও বাড়ছে।
সব মিলিয়ে চা বাগানে করোনার হানার কারণে শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিলেও ছুটি না থাকায় ঝুঁকি নিয়েও কাজ করছেন শ্রমিকরা।
উপজেলার চা বাগান অধ্যুধিত আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত সনজু চৌধুরী বলেন, নিহত ওই শিশুর সঙ্গে যারা স্বাক্ষাত করেছেন তাদের বের করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. মোজাম্মেল হোসেন জানান, সন্দেহবাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি, ফলাফল আসলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের বাসা লকডাউন করা হয়েছে। পরে প্রয়োজন হলে পুরো বাগান লকডাউন করা হবে।
লেট বিভাগে ১৩৪টি বাগান রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বাগানের কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানানো হলেও তা সফল হয়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান চৌধুরী শামসুন্নাহার বলেন, করোনায় নিহত শিশুটি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে ২০ দিন ঢাকায় ছিলেন।
গত ২০ এপ্রিল তারা ঢাকা থেকে বাগানে নিয়ে আসেন। ঢাকা থেকে আসার কারণে ওই শিশুসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হলে ওই শিশু ও তার এক আত্মীয়ের করোনা পজিটিভ আসে।
এরপরই চা বাগানের ১২টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। তার মতে, করোনা পজিটিভ ধরা পড়লেও শিশুটি মূলত ক্যান্সারের কারণেই মারা যেতে পারে।
চা-শ্রমিক নেতা স্বপন সাওতাল বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের ১৬৬টি চা-বাগানের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার চা ও রাবার শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অবিলম্বে মজুরি-রেশনসহ সব শ্রমিকদের ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে ইতোমধ্যে দেশের অনেক জেলায় লকডাউন চলছে।
এরকম পরিস্থিতিতে চা-বাগানে শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে প্রতিদিন । এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছেন প্রায় ১০ লাখ চা-বাগান সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী।
চা-শ্রমিকদের ঝুঁকির বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ )’র কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, এখন কাউকেই ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। চা-বাগানে শ্রমিকরা খুব গাদাগাদি অবস্থায় থাকেন।
তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা উপকরণের অভাবও রয়েছে। ফলে তারা ঝুঁকির মধ্যেই আছেন। এ অবস্থায় তাদের ঘরে থাকাই ভালো। বিষয়টি আমি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মহুদয়কেও জানিয়েছি।