শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আপন দৃষ্টি ৪৯

৭১’এ নারী নির্যাতনকারীদের বিবেক কোথায় ছিল?

আব্দুল মালিক

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক
  • ১১:২০ পূর্বাহ্ণ, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

বলতে শুনা যায় বিবেক থাকলে আদালতে যেতে হয় না। তাই আমার আদালতে আমি নিজেই বিচারক। তাই লেখার শুরুতে বিজয়ের মাসে আজ মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি ৩০ লাখ শহীদের জন্য। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ইজ্জত হারা আড়াই লাখ মা-বোনদের। সেই সাথে ঘৃণা ও নিন্দা জানাই যে সকল কূলাঙ্গারদের আজকের জামাত-শিবির, ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের প্রতি।

যারা ৭১ সালে মুক্তিকামি মা-বোনদের ধরে নিয়ে ধর্ষণের জন্য পাক হানাদার ক্যাম্পে তুলে দিত। আজ যারা বিবেকের কথা বলে, সেদিন ১৯৭১ সালে নারী নির্যাতনকারিদের বিবেক কোথায় ছিল ?

আজকের প্রজন্ম জানে না, ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসে বাংলার আকাশ বাতাস কিভাবে পাক হানাদের নৃশংস, জুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতনের কি ভয়াবহ দৃশ্য ছিল। কিছুদিন আগে বেগমগঞ্জে একজন মহিলাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল আমাদের তরুণ প্রজন্ম। অথচ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের সেই সব নারী নির্যাতনের চিত্র এ প্রজন্ম দেখেনি। একটি বিবস্ত্র নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশের মানুষ ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। একবার ভাবুন সেই দিনের নির্যাতনের চিত্র যদি বেগম গঞ্জের গটনার মত ভিডিওতে দেখানো সম্ভব হত, কি হত এই প্রজন্মের মনের অবস্তা? ৭১ সালে নারীদের যেভাবে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে, যা কলম দিয়ে লিখতে গেলেও হাত কাঁপে।

লিখে গেছেন অনেক বীরাঙ্গনা, অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। হয়েছে অনেক নাটক ও সিনেমা, কিন্তু কি হয়েছে ? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর আবার ধর্মকে সামনে রেখে উত্থান হয়েছে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী, ৩০ লাখ শহীদের হত্যাকারি, আড়াই লাখ মা-বোনের ধর্ষক সে দিনের রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও আজকের জামাত-শিবিরের। এর আগেও এরা চার দলীয় জোটের সাথে ক্ষমতায় এসেছে এবং স্বাধীন বাংলার পতাকাকে কলঙ্কিত করেছে।

১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টের পর কি দেখেছি ?

আজ আমি শেখ মুজিবকে নিয়ে কিছু লিখব না। ঘাতকরা অপবাদ দিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে। কিন্তু শেখ মুজিবের গুটা পরিবারকে কেন হত্যা করা হল? সেদিন রেডিও ষ্টেশন দখল করে টেলিভিশন সেন্টার দখল করে দীর্ঘ নয় মাসের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল ডকুমেন্টারী কেন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হল? অপবাদ দিয়ে শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে। কিন্তু কি অপরাধ ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের ডকুমেন্টারি গুলোর? কেন এই ডকুমেন্টগুলো লুপাট করা হল?

আমার এক দাদা বলতেন, যদি কারো সাথে দুষমনি করতে চাও তবে তাকে দুটি বিয়ে করিয়ে দাও। এটা নাকি বৃটিশের বুদ্ধি। আমি সেদিন দাদাকে প্রশ্ন করেছিলাম, দাদা বিয়ের ফরমুলাটা চমৎকার কিন্তু বৃটিশের বুদ্ধি হল কি করে? দাদা বললেন, এই যে ভারতবর্ষকে দুই শত বছর শাসন করে যখন দেখল ওরা তু জেগে উঠেছে। সুতারাং আস্তে আস্তে করে পাক ভারত ছেড়ে গেল। আর পাশাপাশি হিন্দু মুসলিম দাঙ্গাটাও লাগিয়ে গেল। ভবিষ্যতে যাতে এই জাতি কোন দিন এগিয়ে যেতে না পারে।

বিদেশের মাটিতে আজ ত্রিশ বছর, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে (হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, সাদা, কালো) সকলের সাথে উঠাবসায় অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ বড় বিপদজনক। যে মানুষ গুলো কথায় কথায় বলে, আল্লার কসম, মায়ের কসম, কোরআনের কসম, এবং পবিত্র কোরানকে সামনে রেখে কাজ করে। এরা খুব সহজে মানুষকে ধোকা দিতে পারে এমন কি মৃত্যুর জন্যও প্রস্তুত করতে পারে।

প্রতিটি ইমানদার মানুষের দুর্বল জায়গা ধর্ম। যখন কোন মানুষ কোরআন সামনে রেখে কথা বলে প্রতিটি ইমানদার মানুষের মন দুর্বল থাকে। একজন মুসলমান হিসাবে আমি পবত্র কোরানকে বিশ্বাস করি এবং এটাও জানি কোরআনের প্রতিটি শব্দও সত্য। কিন্তু এই পবিত্র কোরানের শব্দের অর্থকে যখন কোন মানুষ তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ফায়দার জন্য পরিবর্তন করে তখন বিদ্রোহ করি চুপ থাকতে পারি না।

কোরআন হাদিস নিয়ে আমার কথা বলার অধিকার নাই? আমি কোন আলেম, উলামা, মুফতি বা মোহাদ্দিস নই, তাই এই ব্যাপারে কথা বলতে নিষেধ। আমি কিন্তু কোরআনের কোন আয়াতের অর্থ ব্যাখ্যা করি নাই। আমি তাদের দেওয়া ব্যাখ্যা দিয়েই তর্ক করি। আজ খৃষ্টানদের বাইবেলের মত যখন কোন আলিম উলামা বা মুফতি তাদের সুবিধামত পবিত্র কোরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে তখন চুপ থাকতে পারি না।

যেমন আমি মেনে নিতে পারি না যদি কেউ বলে, বিবাহ ছাড়াই যৌন মিলন ইসলামে বৈধ। আমি মেনে নিতে পারি না যদি কেউ বলে, যৌন মিলন বৈধ দু ধরনের মহিলার সাথে, এক নিজের বিবাহিত স্ত্রী, আর দুই কৃতদাশের সাথে। আমি মেনে নিতে পারি না, যদি কেউ একবার বলে মন্দিরের জন্য টাকা দেওয়া হারাম, আবার সে নিজে তার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়।

যেমন আমি মেনে নিতে পারি নাই ১৯৭১ সালে গনিমতের মাল বলে বাংলার যুবতী মেয়েদের পাক বাহিনীকে ধর্ষণের জন্য উপহার দেওয়া। আমি মেনে নিতে পারি না যখন বলা হয় নারী নেতৃত্ব হারাম আবার নিজেই নারীর নেতৃত্বে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করে। আমি মেনে নিতে পারি না যখন কোন মানুষ আমাকে জাহান্নামী বলে, কারণ শেষ বিচারের মালিক স্বয়ং আল্লহ্ এবং সেদিন তিনিই পাপ পূণ্যের বিচার করবেন।

এবার বলব আমি কেন বিদ্রোহ করি। মনে করেন, বিচারের রায় হল, আপনার এক বছরের জেল আর না হলে দশ হাজার টাকা জরিমানা, আপনি কোনটা বেছে নিবেন? জেল না জরিমানা? উত্তর আপনার কাছে। এবার বিচারের রায় হল, পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা আর না হলে আপনার এক হাত কেটে ফেলতে হবে, আপনি কোনটা বেছে নিবেন? উত্তরটা আপনার কাছে। এবার বিচারের রায় হল, আপনার একটা হাত কেটে ফেলতে হবে আর না হলে আপনার মাথাটা কাটা হবে, আপনি কোনটা বেছে নিবেন? উত্তরটা আপনার কাছেই ছেড়ে দিলাম। আমার ইমান আমার প্রাণ, তাই এই জন্যই আমি বিদ্রোহ করি। শেষ বিচারের আগ পর্যন্ত আমার আদালতের বিচারক আমি নিজেই এবং আমার বিচার আমি নিজেই করি।


অন্যান্য খবর