দেশের প্রথম স্মার্ট সিটি সিলেট। ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটারের সিলেট সিটিকে ডিজিটাল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে নেয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। এরমধ্যে বিদ্যুৎ লাইন ভূগর্ভস্থ হয়েছে, হয়েছে ফ্রি-ওয়াইজোনও। এর বাইরে পুরো শহরকে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে চোখে চোখে রাখা হচ্ছে। তবে ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হওয়ার সিলেটের ট্রাফিক ব্যবস্থা লাল, নীল আর সবুজ বাতির বদলে এখনও চলছে হাতের ইশারা, লাটি আর বাঁশিতে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশরা দিনভর বাঁশি আর হাতের লাটিতেই নিয়ন্ত্রণ করছেন যানবাহন।
এতে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে নগরজুড়ে বাড়ছে যানজট। যখনই রাস্তায় পুলিশের সদস্যরা অনুপস্থিত থাকেন তখনই এলোমেলোভাবে চলতে শুরু করে যানবাহন। রং রোডে প্রবেশ, অতিরিক্ত গতি আর আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় বাড়ে যানজট। বাড়ে ভোগান্তি। বিশেষ করে সপ্তাহের কর্ম দিবসগুলোতে নগরীর ছোট ছোটো মোড়েই যানজট লেগে যায়। আর নগরের প্রধান মোড়গুলোতে তো চলাই দায়।
এদিকে গেলো বছরের ১ ডিসেম্বর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন এবং দক্ষতা ও সমন্বয় বাড়াতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক বিভাগে যুক্ত হয় ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’। এর বাইরে ২০১৯ সালের ২১ মার্চ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যানবাহনের উপর দায়েরকৃত মামলার জরিমানা পজ মেশিনের মাধ্যমে আদায় করার উদ্যোগ নেয়। ঐ দিনই ই-ট্রাফিক সিস্টেম চালু করে জরিমানা প্রদানের পদ্ধতি সহজ করে দেয় পুলিশ। দীর্ঘদিনে ট্রাফিক পুলিশে নানা তথ্য আর প্রযুক্তি যুক্ত হলেও বদলাচ্ছে না ‘এনালগ ট্রাফিক’ সিস্টেম।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, মাঝারি শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৬ সালে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপনের কাজ শুরু হয়। নগরীর ব্যস্ততম চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, নয়াসড়ক, সুরমা মার্কেট, নাইওরপুল, আম্বরখানা ও নয়াসড়ক পয়েন্টে স্থাপন করা হয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। কিন্তু পরবর্তীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এই সিগন্যাল বাতিগুলো কার্যকর করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে আরও জানা যায়, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেমিনারে বুয়েট, শাবি, লিডিং ইউনির্ভাসিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তারা নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে একটি রূপরেখা দিবেন। সেই রূপরেখা অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প গ্রহণ করবে।
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলার স্বার্থে সিগন্যাল বাতি লাগানো অবশ্যই প্রয়োজন। এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ। আমরা তাদেরকে বলেছি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে। বাজেট তো আর পুলিশের নিকট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। বাজেট যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের, তাই সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে আসলে দ্রুত এর সমাধান হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা স্থানগুলো চিহ্নিত করে দিতে পারি।’
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রথম দিকে যেকোনো একটি পয়েন্টে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাফিক সিগনাল বাতি লাগানোর চিন্তা করছি। তবে কোনো পয়েন্টে সেটি হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। আর আমরা চাচ্ছি কোনো একটি পয়েন্টে না লাগিয়ে একটা রুটের প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক লাইট লাগানোর জন্য। যাতে আমরা বুঝতে পারি প্রকল্পটি কিভাবে গ্রহণ করলে আমাদের ভালো হয়।