বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক তথ্য তোলে না ধারার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সুনামকণ্ঠের মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন, সংগঠানের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, সুখেন্দু সেন, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি ইয়াকুব বখত বহলুল প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘হাওরে এখনও অর্ধেক ধান কাঁচা অবস্থায় থাকলেও কৃষি বিভাগ খাতাকলমে ধান কাটার পরিসংখ্যান বাড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে। তারা বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে কাজ করছে।’
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘২ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে সুনামগঞ্জের ছোট-বড় মিলিয়ে ৩১টি হাওর তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়।
‘হাওরে এখনও অর্ধেক ধান কাঁচা অবস্থায় থাকলেও কৃষি বিভাগ খাতাকলমে ধান কাটার পরিসংখ্যান বাড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে। তারা বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে কাজ করছে।’
বিজন সেন জানান, ২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ২৪ নম্বর নজরখালী বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরের ১২ শ হেক্টর কাঁচা ধান তলিয়ে যায়। ৪ এপ্রিল ছাতক উপজেলার গোয়া-পান্ডুয়া, নাগা উন্দা, পুটিয়া ও জল্লার হাওরের ৭১ হেক্টর এবং শাল্লা উপজেলার বাঘার হাওরের ৪২৫ হেক্টর ধান তলায়।
পরদিন ৫ এপ্রিল নদীর পানি উপচে কৈয়ারবনন্দ ও পুটিয়ার হাওরের ৪০ হেক্টর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার বাঁধ ভেঙে থালা হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর এবং সোনামরল হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়।
৬ এপ্রিল নদীর পানি উপচে শাল্লা উপজেলার গোব্বরহরি হাওরের ৪০ হেক্টর, দিরাই উপজেলার বৈশাখির বাঁধ ভেঙে চাপতির হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ওইদিন দিরাইয়ের টাংনির হাওরের জারালিয়া খেয়াঘাটের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে প্রায় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে পড়ে। পরে কৃষকরা বাঁধটি মেরামত করেন।
৮ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ফল্লিয়ারদাইড় আফার দিয়ে পানি ঢুকে এরালিয়া হাওরের ১৬ শ হেক্টর এবং মধ্যনগর উপজেলার পাওধোয়া বাঁধ ভেঙে মুক্তারখলা হাওরের ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়।
১৭ এপ্রিল বাঁধ ভেঙে গুরমার হাওরের ২ হাজার হেক্টর, দিরাই উপজেলার হুরামন্দির বাঁধ ভেঙে ১২ শ হেক্টর এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইডরা বিল, পুরাইডরা, নউল্লা, বইশমারা, বারকুল, সিলাইন, ডাবরবিল, মরা ডাবরের ৪৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এ ছাড়া ওইদিন নদীর পানি উপচে জগন্নাথপুর উপজেলার গলাকাটা হাওর ও শেওরারবন হাওরের ৩২৫ হেক্টর জমির ধান ডুবে যায়।
এরপর ২০ এপ্রিল মধ্যনগরের ইন্দরপুর বাঙ্গালভিটার বাঁধ ভেঙে রাঙ্গামাটির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর হাপাতির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর আহমদাবাঁধ হুন্দাবিললের ৭৫ হেক্টর জমির ধান ডুবে যায়।
২১ এপ্রিল কোন্দানাল ব্রিজের পুটিয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে ছাতক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৫০০ হেক্টর, ২৪ এপ্রিল শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়।
সর্বশেষ ২৬ এপ্রিল জামালগঞ্জ উপজেলার আছানপুরের বাঁধ ভেঙে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়েছে।