সিলেট মহানগরে দিন দিন বাড়ছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস আর লেগুনা স্ট্যান্ড। নিয়ম নীতি কিংবা আইন কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এসব অবৈধভাবে সড়ক দখল করে স্ট্যান্ড তৈরি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন কিংবা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ গত কয়েক বছরে বহুবার এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে চেষ্টা করলেও কোনো সুফল পায়নি। উল্টো সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলেই পুরণো রূপে ফিরে যান এসব অবৈধ দখলকারীরা।
নগরে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে বারবার ব্যর্থ হয়ে এবার বিকল্প পথে হাটছে সিসিক ও এসএমপির ট্রাফিক পুলিশ। এজন্য নেয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। সিলেট নগরীর এসব স্ট্যান্ড কোথায় কোথায় স্থানান্তর করা যায় সেই জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের লক্ষে এবার একযোগে কাজ করছে পুলিশ-সিসিক।
আর সড়কে রাখা গাড়িগুলোর জন্য বিকল্প হিসেবে খোঁজা হচ্ছে জায়গা। যাতে গাড়িগুলো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা যায়।
এদিকে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দখল করে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এর বাইরে আইন লঙ্ঘন করে প্রাইভেট মাইক্রোবাস করছে যাত্রীপরিবহণ। অবৈধ গাড়ি পার্কিং এর জন্য কিংবা নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রাইভেট পরিবহণ গণপরিবহণের কাজ করলেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ বলে অভিযোগ নাগরিকদের।
জানা যায়, প্রাইভেট পরিবহণে যাত্রী পরিবহণের নিয়ম ভেঙে দীর্ঘদিন থেকেই সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনের সড়ক দীর্ঘদিন থেকে দখল করে এ কাজ করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। এতে ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েন।
আর চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার সড়কের দুপাশ দখল করে তৈরি করা হয়েছে কার-মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। এর বাইরে নগরীর সুবিদবাজার, আখালিয়া, সিলেট সরকারি কলেজের সামনের সড়ক, চন্ডিপুল, শাহী ইদগাহ, মানিকপীর টিলার সামনে সড়কসহ নগরজুড়েই আছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ডে অবৈধ পার্কিং করলেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ।
অন্যদিকে সিলেট নগরীর জেলরোড পয়েন্ট থেকে শিশু পার্কের সামনা পর্যন্ত সড়ক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে লেগুনা স্ট্যান্ড। দীর্ঘদিন থেকে ব্যস্ততম এ সড়কে স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হলেও উচ্ছেদে নেই কোনো পদক্ষেপ। এর বাইরে এসব লেগুনা ১৫ কিলোমিটারের রুট পারমিট নিয়ে চলছে প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এছাড়া হাইওয়ে সড়কে এসব থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও নিষেধাজ্ঞা মানছেন না লেগুনার চালক-শ্রমিকরা।
এর বাইরে শিশুদের দিয়ে হেলপারের কাজ করানো কিংবা অদক্ষ চালকের দিয়ে এসব লেগুনা চালানোর কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। কেউ কেউ বরণ করছেন পঙ্গুত্ব। সব মিলিয়ে ‘কোনো আইন না মেনে চলা’ লেগুনাকে আইন অনুযায়ী পরিচালনার জন্য নেই কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। উল্টো পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সিলেট থেকে জৈন্তাপুর পর্যন্ত চলাচল করছে এসব লেগুনা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এসব স্ট্যান্ড থেকে পুলিশ হয়তো মাসিকহারে একটা টাকা পায়। সেজন্য পুলিশ তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে। আর যখন প্রেশার আসে তখন পুলিশ সাময়িক সময়ের জন্য তাদেরকে সরিয়ে দেয়।
তা না হলে তো এসব ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় থাকার কথা নয়। এগুলো যার যার বাড়িতে থাকবে। যিনি ব্যবহার করবেন তিনি তার বাড়িতে পার্কিং করবেন। আর বাইরে বের হলে পার্কিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি রাখবেন।’
লেগুনা হিউম্যান হুলার চালক শ্রমিক ইউনিয়ন (চট্ট-১৩২৬) তামাবিল স্ট্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত স্ট্যান্ডের জন্য আমরা মেয়র মহোদয়ের নিকট বারবার আবেদন করেছি। কিন্তু মেয়র মহোদয় আমাদের বারবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে তিনি আমাদেরকে উচ্ছেদ করেন আবার আমরা এসে বসি।
তিনি সবশেষ আমাদের স্ট্যান্ড থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। তখন তিনি আমাদের বলেছিলেন একটি জায়গা বের করে দিবেন কিন্তু তিনি দেননি।’
সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মুইম বলেন, ‘নির্দিষ্ট পার্কিং এর বিষয় নিয়ে আমরা মেয়র সাহেবের কাছে বারবার গিয়েছি। আমরা বলেছি আমাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গা দেয়ার জন্য। তিনি একদিকে আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন, আবার উচ্ছেদ অভিযানও করছেন।’
প্রাইভেট গাড়ি পাবলিক হয়ে যাচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা গাড়ি কেনেন তারা প্রথমে নিজের ব্যবহারের জন্য কেনেন। পরে দেখা যায় এটি খুব বেশি ব্যবহার করেন না। তখন তারা আমাদের স্ট্যান্ডে দিয়ে দেন। যাতে কিছুটা আয় হয়। এই প্রবণতা সিলেটে বেশি।
কারণ প্রাইভেটের তুলনায় পাবলিক সার্ভিসে রেজিস্ট্রেশন ফি কম থাকে। আর গাড়িগুলো ব্যক্তিগতভাবে আনলেও পরে গাড়ির মালিকরা সার্ভিসে দিয়ে দেন। আর রেজিস্ট্রেশন করার আগে তো কোনো মালিক আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন না। করলে আমরা তাদের সার্ভিস দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার কথা বলতাম।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়ছল মাহমুদ বলেন, ‘অবৈধ পার্কিং করলে আমরা মামলা দেই এবং উচ্ছেদ অভিযানও করি। এছাড়া আমরা একটা করিকল্পনা নিচ্ছি, যার মাধ্যমে আমরা এদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারবো।’
বিষয়টি নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, ‘আমরা এসব গাড়িগুলোর জন্য একটা নির্দিষ্ট পার্কিং জোন খুঁজছি। কারণ বিভিন্ন সময় আমরা উচ্ছেদ করলেও তারা আবার রাস্তায় গাড়ি রাখছেন। এজন্য আমরা একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।’